স্বপ্নজয় সততা ও দৃঢ়তার নিদর্শন

অর্থনৈতিক দিক পর্যালোচনা করলে বলা যায়, পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিকে সচল ও অধিকতর চাঙ্গা করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এই সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পদ্মা সেতু ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগসূত্র স্থাপন করবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চেহারা বদলে দেবে পদ্মা সেতু।

দেশের অন্যতম গুরূত্বপূর্ণ দুটি নৌবন্দরের একটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর নতুন উদ্যমে চালু থাকবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে নিকট ভবিষ্যতে রেল যোগাযোগ ঢাকা থেকে যশোর হয়ে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। যাত্রীসাধারণ ভ্রমণ এবং পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় করতে পারবেন। পদ্মা নদীর উভয় পারে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় ভূমি অধিগ্রহণের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুসারে নদীর দুই পারে ৭টি মডেল টাউন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের অবস্থা তেমন উন্নত ও যুগোপযোগী নয়। এই দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় বটে, কিন্তু যোগাযোগ সমস্যার কারণে নিঃসন্দেহে দরিদ্র কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি এ সেতুকে কেন্দ্র করে নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল রাখবে।

পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে রুট এএইচ-১-এর অংশ হওয়ায় তা যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলওয়ের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই পথে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে। খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিমি, কিন্তু কখনো কখনো সময় লাগে ৮/১০ ঘণ্টা, পদ্মা সেতু দিয়ে সেই ভ্রমণ সময় কমে আসবে মাত্র ৪ ঘণ্টায়। পদ্মা সেতু ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কাঁচামাল সরবরাহ ও শিল্পায়ন সহজতর করতে সহায়তা করবে। ফলে গড়ে উঠবে বড় বড় শিল্প ও শিল্পাঞ্চল। চিংড়ি, কাপড় ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে। সেতুর পাশে গড়ে উঠবে বিভিন্ন ধরনের বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল এবং বেসরকারি শিল্প শহর।

দক্ষিণাঞ্চলের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, মাওয়া ও জাজিরায় পুরনো-নতুন রিসোর্টসহ পর্যটনকেন্দ্র দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সততা, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার কাছে পরাজিত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। সারাবিশ্বকে শেখ হাসিনা আবারও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর বাণীকে ধারণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন- ‘বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি এবং পারবেও না কোনোদিন।’ এই জয় বাংলার মানুষের। এই জয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীকে আবারও চিনিয়েছেন- বাঙালি মাথা নোয়াবার নয়।

জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
জয়তু শেখ হাসিনা

তথ্য সংগ্রহ ও লিখিতে

মোঃ বাহাউদ্দিন বাহার
সাবেক ছাত্রনেতা ও উন্নয়ন কর্মী
baharcou2009@gmail.com